মনে ভারি সুখ হলে দুদিনের জন্য বেড়িয়েই আসুন উড়িষ্যার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাংরিপোসি। পাহাড়, জঙ্গল, নদী আর আদিবাসী গ্রাম নিয়ে ভ্রমণ বিলাসিদের জন্য পথ চেয়ে অপেক্ষা করছে ছোট্ট এই জনপদটি। শিমলিপাল ফরেস্ট রেঞ্জের উত্তর দিকে ঠাকুরানী পাহাড়ের কোলে বিস্তীর্ণ সমভূমিতে আপনি যেখানে খুশি ঘুরে বেড়ান নিশ্চিন্তে। পাহাড় চড়তে চাইলে হেঁটে বা গাড়িতে চার কিলোমিটার গিয়ে দেখে আসুন বনদূর্গা বা দেবী বাংরিপোসির মন্দির। ওই গাড়ির রাস্তাই চলে গেছে বিসই হয়ে কেওঞ্ঝার। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় চলতে বনবাসীদের দেখা মিলতে পারে। প্রথম চার কিলোমিটারের মধ্যে পথের দুধারে মিলবেই অসংখ্য বানর আর হনুমান। জায়গায় জায়গায় রয়েছে হাতি চলাচলের করিডোর। এ পথে আপনি কতদুর যাবেন? এটা যে বম্বে রোড়। ৬নং জাতীয় সড়ক।

বাংরিপোসি রেল স্টেশন ছাড়িয়ে বুড়িবালাম নদীর ব্রীজ থেকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত যেন শিল্পির আঁকা ছবি। বুড়িবালাম নদী এক এক জায়গায় এক এক রূপে আপনার যাত্রাপথে পড়বেই। ঠাকুরানী ছাড়াও বুড়াবুড়ি পাথরকুসি, বিদ্যাভান্ডার নামের নানান পাহাড় চারদিকে ঘিরে রেখেছে রূপসী বাংরিপোসিকে। গা ছমছমে আরণ্যক পরিবেশে নানা দিক দিয়ে ব্রাহ্মণ কুন্ডে যাওয়ার পথ রয়েছে। সে পথ কখনো পীচের, কখনো কংক্রীটের, কখনো বা স্রেফ লাল মাটির। শাল, মহুয়া, শিমুলের পাশাপাশি রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল সমেত নানান ফল আর সবজির গাছ-গাছালি। এক এক জায়গায় আম বাগান দেখে মালদা-মুর্শিদাবাদের বাগান বলে মনে হবে। মাঝে মাঝে পথের দুধারে পড়বে আদিবাসিদের ঘরবাড়ি। নিকানো উঠোন আর সুদৃশ্য লতাপাতা আঁকা আলপনায় চিত্রিত দেওয়াল। যত্র তত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে সুপুষ্ঠ চেহারার লাল ঝুটি মোরগের দল। পথের ধারেই হাড়িয়া নিয়ে বসে গেছে কচিকাঁচা সহ নারী-পুরুষ। সবই এখানে খোলামেলা। উদাসী না হয়ে চলতি পথেই আলাপচারিতায় এদের খানিকটা কাছে যাওয়া যেত কিন্তু ভাষা এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
অনেক স্কুল চোখে পড়েছে। চোখে পড়েছে স্কুলড্রেসে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে মেয়েরাও। চোখে পড়েছে বড় রাস্তার মোড়ে, এমনকি আদিবাসি গ্রামের রাস্তায় সোলার ল্যাম্পের আলোক স্তম্ভ আর ডিস অ্যান্টেনা! আবার চোখে পড়েছে সকাল সাতটার মধ্যে একটি মুরগি বেঁচতে আট কিলোমিটার বন-পাহাড় ডিঙিয়ে ষাটোর্দ্ধ মানুষ পথ হাঁটছে। চোখে পড়েছে বাংরিপোসি হোটেলে বুদ্ধদেব গুহর সেই বুধোয়া চরিত্র। আমার ডাকাডাকিতে একটা লাঠিতে ভড় দিয়ে খুঁড়িয়ে ঘরের বাইরে এসে খাটিয়ায় খানিক সময় বসল। বুধোয়ার মেয়ে তার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে এগিয়ে এল। বুধোয়ার নাতি আকাশকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমিও কি দাদুর মতো হোটেলের দেখাশোনা করবে, না পড়াশোনা করে বড়ো চাকরি করবে? ছোট্ট ছেলে একটু হেসে বলে ‘পড়ব’। বুধোয়ার মেয়ে তার ছেলেমেয়ে দুটিকে দুহাতে জাপটে ধরে।

পথ নির্দেশ
কলকাতা-খড়্গপুর-লোধাশুলি-ফেকো-গোপীবল্লভপুর-হাতিবাড়ি হয়ে বাংরিপোসি ২৩০ কিমি। বালেশ্বর থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়।
থাকার জায়গা
১) হোটেল বাংরিপোসি 9831309512 এদের
তিনটি রুম একত্রে ২০০০ টাকা।
২) খইরি রিসর্ট 9437877730 এখানে DAB
১০০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
৩) শিমলিপাল রিসর্ট; 9437612747 রুম ৮০০ টাকা। এখানে বাজার করে দিলে কুক রান্না করে দেবে মাথা পিছু ৩৫ টাকায়।
বাইরে খাওয়ার হোটেল ঠাকুরানী পাহাড়ের দিকে খইরি থেকে ১ কিমি দিলখুস ধাবা। ৭০-৮০ তে মাছভাত। আর আছে বাপি মোহান্তের হোটেল সন্তোষ বাংরিপোসি বাজারে।
যাতায়াতের পথে গোপীবল্লভপুরে SBI এর গায়ে ধাবা গরমা গরম সত্যিই বেশ ভাল খাবার পরিবেশন করে।