আচিপুর(Achipur), বজবজ(Budge Budge) – ৩৩ কিমি কলকাতা(Near Kolkata) হইতে :

ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে চীনা ব্যবসায়ী টং আচি বজবজের দক্ষিণে হুগলী নদীর তীরে একটি চিনি কল স্থাপন করেন। সেই থেকে এই জায়গা্তে ধীরে ধীরে চীনা উপনিবেশ গড়ে ওঠে। টং আচির অধীনে এখানে একটি আখ বাগান ছিল। সেই বাগান থেকেই চিনি কলে কাঁচামালা সরব্রাহ হত। ধীরে ধীরে বাগান এবং কারখানা বন্ধ হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত চীনা পরিবার সেখান থেকে চলে যায়।

আচিপুরে দেখার জায়গা:

অতীতে এই অঞ্চলটিতে যখন চীনা লোকজন বসবাস করতেন, তখন তাদের উদ্যোগে সেখানে একটি প্রসিদ্ধ চিনা মন্দির নির্মিত হয়। বর্তমানে এই মন্দিরটি আচিপুরের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থানে পরিণত হয়েছে। এই মন্দিরের প্রধান আরাধ্য চৈনিক দেবদেবী হলেন খুদি ও খুদা। আর পাঁচটা সাধারণ চিনা মন্দিরের আদলেই এই মন্দিরের কাঠামোটি নির্মিত হলেও এখানে সুদৃশ্য কাঠের ওপর যে কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা খুবই রুচিসম্মত। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারটি বেশ ছোট হওয়ায় এখানে ঢুকতে গেলে দর্শনার্থীকে খানিকটা ঝুঁকে তারপর ভিতরে ঢুকতে হয়। এই মন্দিরের চারিপাশটা নীচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং এই মন্দিরটি কমপ্লেক্সের এক কোণে অবস্থিত । যদিও বর্তমানে এই মন্দির কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে একটি সুবিশাল প্রবেশদ্বার নির্মান করা হয়েছে ।

এই মন্দির ছাড়াও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক হল, টং আচির সমাধিস্থল। এই সমাধিস্থলটি অর্ধবৃত্তাকার ও লালবর্নের , এমনকি এর ওপরে চিনা শিলালিপিও খোদাই করা আছে। দুটি ইঁটভাটার মধ্য দিয়ে শর্টকাটের মাধ্যমে মন্দির থেকে সরাসরি সমাধিস্থলে পৌঁছানো যায় ।

আচিপুরের নিকটবর্তী আকর্ষণ:

শিকাগো সফর সেরে ফেরার সময় স্বামী বিবেকানন্দ বজবজের ফেরিঘাটে অবতরণ করেছিলেন সেজন্য এই ফেরিঘাটটি ঐতিহাসিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। তাই আপনি চাইলে এই ফেরিঘাটে বসে গঙ্গাবক্ষে ভাসমান বিভিন্ন জলযান দেখে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।

আচিপুরে কি করণীয়:

চৈনিক ইতিহাস যারা জানতে ইচ্ছুক,অথবা যারা এই বিষয়ে কিছু গবেষণা করছেন তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ভ্রমণস্থল। এই জায়গাটি পিকনিক স্পট হিসেবেও বেশ ভালো। এখান থেকে আপনি হুগলিতেও ভ্রমণের জন্য খুব সহজেই পাড়ি দিতে পারেন ।

কীভাবে আচিপুরে পৌঁছাবেন:

কলকাতা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায়,খুব সহজেই কলকাতা থেকে বাসে চেপে আচিপুরে যাওয়া যায়। এসপ্ল্যানেড থেকে যে ৭৭নং রুটের বাসগুলি ছাড়ে সেগুলি চড়েই আমরা গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পারি । বাসে যেতে প্রায় ২ঘন্টার মতো সময় লাগে। কলকাতা থেকে বাস ধরে বোরো বাটালা বাস স্টপেজে নেমে সেখান থেকে ১৫ মিনিট হেঁটে চায়নামানতলায় যেতে হবে,যেখানে একটি প্রাচীন মন্দির ছিল ।

আচিপুর দেখার সেরা সময়:

মূলত চিনা নববর্ষের সময় ,এই জায়গাটি ভ্রমণের জন্য সেরা। এই সময় এখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়,যার ফলে এই ঘুমন্ত জনপদটি একটি জমজমাট মেলাপ্রাঙ্গণে পরিণত হয়। এই সময় এখানে বসবাসকারী চিনা সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে,যে কারনে পর্যটনকারী লোকেরা এখানকার চিনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন।

আচিপুরে থাকার সুবিধা:

বজবজে কয়েকটি থাকার সুবিধা রয়েছে তবে আচিপুর কলকাতা থেকে একদিনের ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।

আচিপুরে ডাইনিং সুবিধা :

কয়েকটি খাবারের দোকান জায়গাটির আশেপাশে অবস্থিত।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.