আন্দেন, সোমবারিয়া (Anden, Sombaria) – ১২২ কিমি শিলিগুড়ি হইতে :

আন্দেন হল এককথায় সিকিমের ভূস্বর্গ, যেখানে সাদা বরফের চাদরে মোড়া পর্বতমালাকে ঘিরে রয়েছে সবুজের আবরণ। এই স্থান থেকে আপনি খুব সহজেই বিখ্যাত বার্সি রডোডেনড্রন ট্রেকিং করতে পারবেন। এছাড়াও এর কাছাকাছি পর্যটনস্থানগুলি হল, জুরেলি ভিউ পয়েন্ট , গথং জলপ্রপাত, ডোডাক হেলিপ্যাড,

দেবী ফলস ,দরমদীন সাঁই মন্দির, মাঙ্গহিম এবং সোমবারিয়া মার্কেট। এগুলি ছাড়াও সিকিমের রিনচেনপং

এবং বিক্সথাং যা পশ্চিম সিকিম ও নামচি যা দক্ষিন সিকিমে অবস্থিত। আন্দেনে একটি সুন্দর বন বিশ্রামঘর রয়েছে যেখানে আপনি সবরকমের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।

আন্দেন উপভোগ করার জায়গাগুলি :

আন্দেনের মূল আকর্ষন হল হিলি – ভার্শি রডোডেনড্রন ট্রেকিং। এটি আন্দেন থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই ট্রেকিং ক্ষেত্রটি ভার্শিতে ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। আপনি আন্দেন থেকে হিলি ভ্রমণের সময়,খুব সহজেই কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার প্রাকৃতিক দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি জুরেলি ভিউ পয়েন্ট থেকে পায়ে হেঁটে ঘনতুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী, দার্জিলিং , সোম্বারিয়া এবং পাহাড়ের অতুলনীয় সৌন্দর্যের দৃশ্য অনায়াসে লেন্সবন্দি করতে পারেন। আন্দেনের পরিবেশে পাহাড় ও জঙ্গল্ মিলেমিশে এক অদ্ভুত বৈচিত্রের জন্ম দিয়েছে যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায়না।

এখানকার জঙ্গলে নানাধরনের পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়া যায় এবং এদের কিচিরমিচির শব্দে শান্ত আন্দেনের জঙ্গলও যেন প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।

আন্দেন ফরেস্ট হাউসের কাছাকাছি আর্কষনীয় টুরিস্ট স্পট :

আন্দেনের বন বিশ্রামঘর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে হিলি, যেখান থেকে আপনি স্বচ্ছন্দে হিলি ভার্সি রডোডেনড্রন ট্রেকিং এর আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এরপরেই মাত্র ২ কিলোমিটারের দূরত্বেই রয়েছে দরমদীন সাঁই মন্দির। আন্দেনের নিকতবর্তী অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলি হল, ওলং মঠ, কিতান জলপ্রপাত, ডোডাক হেলিপ্যাড ও প্রজাপতি আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকা এবং অন্যান্য ট্যুরিস্ট স্পট। এছাড়াও রয়েছে দেবী জলপ্রপাত, গাথাং অলস, ইপিসি গীর্জা,রিব্দি গ্রাম ও একটি লেপচা যাদুঘর। সোম্বারিয়া থেকে আন্দেন পর্যটনকালে পথেই পড়বে এই সব দর্শনীয় স্থানগুলি। 

আন্দেনে যা যা করবেন :

আন্দেনে ঘুরতে গিয়ে আপনি যদি ট্রেকিং না করেন ,তবে এই ভ্রমণ আপনার অসম্পূর্নই থেকে যাবে । সাধরণত এখানে এসে পর্যটকেরা গাড়ি চড়ে হিলি ভ্রমণ করেন এবং এরপর তারা ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ

রডোডেনড্রন অভয়ারন্যে ট্রেকিং শুরু করেন । এখানে ট্রেকিং করার সময় আপনি মাউন্ট কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। মূলত সকালের দিকে এই কাঞ্চজঙ্ঘাকে কখনও

লাল কখনও গোলাপী বা কখনও সাদা রঙ্ এর খেলায় মাতোয়ারা হতে দেখা যায়। এখানকার বিশ্রামাগারে আপনি সকালে এক কাপ গরম চা এ চুমুক দিতে দিতে বরফ ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করতে পারবেন ঠিক তেমনই সন্ধ্যাবেলায় আপনি এখানে মুরগির মাংস রোস্ট করে ক্যাম্পফায়ারেরও আনন্দ নিতে পারেন।

আন্দেন ঘুরতে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় :

আন্দেন ঘুরতে যাওয়ার জন্য সেরকম কোন বিশেষ সময় নির্ধারিত নেই। তাই যেকোন সময়েই সেখানে ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। তবে আপনি যদি অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সেখানে ঘুরতে যান, তবে কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে পারবেন এছাড়াও যদি মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে আন্দেনে যান, তবে সেখানে আপনি সম্পুর্ণ প্রস্ফুটিত রডোডেনড্রন এর দৃশ্য দেখতে পাবেন। পাখি দেখার জন্য সেরকম কোন বিশেষ সময় নেই,সারাবছরই নানাধরনের পাখির আনাগোনা লেগেই থাকে আন্দেনে।

আন্দেনে থাকা-খাওয়ার সুযোগ সুবিধা :

আন্দেনে ভ্রমন করতে গিয়ে থাকার মত একমাত্র আশ্রয় হল, ফরেস্ট হাউস। এটি বনের একপ্রান্তে জনবসতি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এই রেস্ট হাউসে থাকার ঘরগুলি বেশ বড় ও আরামদায়ক।

ঘরগুলি কাঠের আসবাবপত্র ও কার্পেট দিয়ে সুসজ্জিত। এখানে প্রতিটি ঘরের সাথে রয়েছে অ্যাটাচড বাথরুম, রুম হিটার, গিজার, এমনকি টিভির মতো অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা । এখান থেকেই পর্যটকদের জন্য ট্রেক গাইড ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এখানে একটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট এবং গাড়ি পার্কিং এর সুবন্দোবস্ত রয়েছে। তাই আর দেরী না করে আজই চলে আসুন আন্দেনে আর উপভোগ করুন অনন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভান্ডার। 

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.